Ad
  • মাধুকর প্রতিনিধি
  • তারিখঃ ১৬-৪-২০২৩, সময়ঃ সকাল ০৯:২৫

ভরতখালী কাষ্ঠকালী মন্দির সনাতন ধর্মাবলম্বীদের পবিত্র স্থান

ভরতখালী কাষ্ঠকালী মন্দির সনাতন ধর্মাবলম্বীদের পবিত্র স্থান

জয়নুল আবেদীন, সাঘাটা ►

উত্তরবঙ্গের ঐতিহ্য ভরতখালী কালীমন্দির সনাতন ধর্মাবলম্বীদের পবিত্র পীঠস্থান। এই স্থানে দেবী কাষ্ঠকালীর মন্দিরে পূজা অর্চনা দেয়াকে ঘিরে প্রতিবছরের ন্যায় বৈশাখী মেলা গতকাল শনিবার শুরু হয়েছে। ভরতখালী কালিমন্দির ৩শ’ বছরেরও অধিক পুরানো, অতি প্রাচীন ও ঐতিহাসিক একটি মন্দির। যা সনাতন ধর্মাবলম্বীদের কাছে পবিত্র এক পীঠস্থান। ভক্তরা দেবী-কে খুশি করতে দেশের দূর-দূরান্ত থেকে এই পীঠস্থানে ভোগ নিয়ে ছুটে আসেন। এ মন্দিরের প্রতিমাটি নির্মিত হয়েছে প্রাচীন আমলে একটি কাঠের গুড়ি দিয়ে। সেই থেকে এই মন্দিরের দেবীকে ডাকা হয় কাষ্ঠকালী নামে।

প্রতিদিন তিন বেলা মন্দিরে পূজা হয়। সারা বছর শনি ও মঙ্গলবার মন্দিরে পূজা ও পাঠাবলি হয়। ভক্তরা দুরদুরান্তর থেকে এসে দেবীর আরাধনা করে থাকেন। এছাড়া মন্দিরকে ঘিরে এখানে প্রতিবছর বৈশাখ মাসব্যাপী শনি ও মঙ্গলবার মন্দিরে বিশেষ পুজা আরাধনা হয়। এছাড়া  প্রতি শনিবার ও মঙ্গলবারে অনুষ্ঠিত হয় দেবী কাষ্ঠকালীর বিশেষ পূজা ও মেলা। প্রাচীন ঐতিহাসিক  এই মন্দিরটি গাইবান্ধা জেলা শহর থেকে ২০ কি দেিণ দূরে এবং বগুড়া জেলা শহর থেকে প্রায় ৪০ কি:মি: উত্তরে যমুনা নদীর পশ্চিম তীর সাঘাটা উপজেলার ভরতখালী ইউনিয়নের হাট ভরতখালীতে অবস্থিত।

প্রথম দিকে এই স্থানে একটি খড়ের নির্মিত মন্দিরে স্থাপন করে দেবীকে পূজা দেয়া হয়। সেই খড়ের মন্দিনের পিছনের বেড়া ঘেষেই বেড়ে উঠেছে একটি পাকুরগাছ। পরবর্তীতে খড়ের মন্দিরটিকে পাকা দালানে পরিণত করেন রাজা রমনী কান্ত। সেই থেকে জাগ্রত দেবী কাষ্ঠকালী রূপে এই মন্দিরে জাকজমক ভাবে পূজা অর্চনা হয়ে আসছে। এই মন্দিরে ৭ একর ২৮ শতক জমি রয়েছে। মন্দিরে পুজার করার জন্য রয়েছে ২ জন পুরোহিত। পূজা উদযাপনের জন্য সনাতন ধর্মালম্বীদের নিয়ে ৩২৬ জনের সাধারণ পরিষদ ৫১ সদস্য বিশিষ্ট কার্যকরী পরিষদ এবং ৮ সদস্যের একাট উপদেষ্টা পরিষদ রয়েছে।   

এই মন্দিরে পূজা অর্চনা উপলক্ষে প্রতি বছরের বৈশাখ মাসে শনি ও মঙ্গলবার উত্তরবঙ্গ ছাড়াও দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে এমনকি ভারতের বিভিন্ন জেলা থেকেও লোকজন আসে এখানে। একারণে নারী-পুরুষ, শিশু-কিশোর-কিশোরী, যুবক-যুবতীসহ  প্রচুর সংখ্যক লোকজনের সমাগম ঘটে মেলায়। এখানে আগত সনাতন ধর্মের লোকজন তাদের মনোবাসনা পূরণের জন্য পাঁঠা, কবুতর, শাড়ি, গহনা, ফল-মূল, মিষ্টান্ন মানত করে থাকেন।

কথিত আছে, ১৯৯০ সালে যমুনার ভয়বহ ভাঙনে ভরতখালীর পূর্বাংশ ভেঙে বিলীন হয়ে যেতে থাকে। একটা পর্যায়ে নদী কালী মন্দিরের সীমায় আসে তখন সবাই ভেবেই নিয়েছিলো এবার হয়তো কালী মন্দির আর রা হবে না। ভাঙন আর মাত্র একশ হাত এগোলেই পুরো মন্দিরটি নদীর গর্ভে বিলিন হয়ে যেতো। সেই মুহুর্তে থেমে যায় নদীর ভয়াবহ ভাঙন । এরপর  মন্দিরের পাশে নদীর ভাঙন এলাকায় চর জেগে ওঠার ফলে নদীর গতিপথ পরিবর্তন হয়ে আবার পূর্বদিকে চলে যায়। কোনো প্রকার প্রতিরোধ ছাড়াই ভাঙন বন্ধ হয়ে নদীর গতিপথ পরিবর্তন হওয়ায় জাগ্রত কালী মন্দির তার স্থানেই স্ব-মহিমায় রয়ে যায়।

মন্দিরের পুরোহিত দীনবন্ধু চন্দ্র চক্রবর্ত্তী দুলাল বলেন, “আমি ৪০ বছর ধরে মায়ের এই পবিত্র পীঠস্থানে পূজা করছি। এই মন্দিরের মা খুব জাগ্রত। প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে মায়ের দর্শন করতে মন্দিরে ভক্তরা আসেন।”

স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান মোশারফ হোসেন সুইট বলেন, বর্তমানে আমরা বয়স ৫০ বছর পেরিয়ে গেছে,জন্মের পর থেকে দেখে আসছি এই মন্দিরে সনাতন ধর্মলম্বীদের পূজা দেয়া ঘিরে প্রতিবছর বৈশাখ মাসে শনি ও মঙ্গলবারে অনেক বড় মেলা বসে মেলার পাশাপাশি হাট ও বসে। পাশাপাশি এই ভরতখালীর হাট উত্তরবঙ্গের সর্ববহৎ পশুর হাট। এক সাথে একই দিনে মেলা এবং হাট বসার কারণে প্রচুর লোকজনের সমাগম ঘটে এখানে। দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে এসে ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার লোকজন কেনাকাটা করে।  

মন্দির কমিটির সভাপতি রনজিৎ কুমার চন্দ ও সাধারণ সম্পাদক অশোক কুমার সিংহ বলেন,“ভরতখালীর কাষ্ঠ কালী মন্দির ৩ শ’ বছরের অধিক প্রচীন মন্দিরের ইতিহাস-ঐতিহ্য ধরে রাখতে বর্তমান প্রজন্ম কাজ করছে। এখানে প্রতি শনি এবং মঙ্গলবার এই মন্দিরে প্রায় ৩০০ থেকে ৩৫০টি করে পাঠাবলি হয়।  মন্দিরের ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে এখানও বৈশাখ মাসে মন্দিরে বিশেষ আরাধনা ও মেলার আয়োজন করা হচ্ছে। ভবিষ্যতেও এই ধারা অব্যহত থাকবে।


 

নিউজটি শেয়ার করুন

Ad

এ জাতীয় আরো খবর
Ad
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
Ad